ঢাকা,সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪

ফুলছড়ি ঝারি খাল ভরাট করে অবৈধ বাঁধ দিয়ে চিংড়ি ঘের!

সেলিম উদ্দিন, ঈদগাঁহ প্রতিনিধি :: চকরিয়া উপজেলার খুটাখালী ফুলছড়ি ঝারি খাল ভরাট করে অবৈধভাবে বাঁধ দিয়ে চিংড়ি ঘের করে প্রকৃত খতিয়ানি জমির মালিকদের বঞ্চিত করার অভিযোগ উঠেছে। এতে করে একদিকে প্রতিনিয়ত চরমভাবে বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে ঐ এলাকার চিংড়ি ও লবণ চাষের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা। আর অন্যদিকে পানির প্রবাহ না থাকায় তলদেশ ভরাট হওয়ার ফলে নব্যতা হারিয়ে গতিহীন হয়ে পড়ছে ঝারি খাল। তাছাড়া ঝারি খাল ভরাট করায় পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা বন্ধ হওয়ায় বর্ষার মৌসুমে নিন্মাঞ্চলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টির কারনে লবণ মৎস্য চাষ ব্যহৃত হচ্ছে।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কতৃক সকল সরকারী খালের ইজারা বাতিলসহ পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা তথা খালের পানি প্রবাহের ধারা অব্যাহত রাখতে বিভিন্ন স্থানে অবৈধ উচ্ছেদে অভিযান পরিচালিত হলেও ফুলছড়ি ঝারি খাল এখনও রয়ে গেছে অবৈধ ভুমিদস্যুদের কবলে। বিগত বেশ ক’বছর পুর্বে ইজারার নামে ঝারি খালের মুখে মাটির বাঁধ দিয়ে পানির প্রবাহ বন্ধ করে দিয়েছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। বছরের পর বছর ইজারাদার চক্রের স্বেচ্ছাচারিতা, জবর দখলকারীরা ঝারি খাল দখল প্রবনতা ও খালে জাল বসিয়ে সম্পুর্ন ব্যাক্তি স্বার্থে অবৈধভাবে মাছ চাষ করা হলেও তাদেরকে উচ্ছেদে চকরিয়া উপজেলা প্রশাসন কোন পদক্ষেপ না নেয়ায় বর্তমানে খালটি নব্যতা হারিয়ে অনেকটা শ্বাসরুদ্ধ হয়ে পড়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার খুটাখালী ইউনিয়নের ফুলছড়িসহ আশেপাশের কয়েকটি এলাকার পানি নিষ্কাশন ঝারি খালের ওপরেই নির্ভরশীল। যুগ যুগ ধরে ঝারিরখালের মাধ্যমে এলাকার পানি নিষ্কাশিত হয়ে আসছে ফুলছড়ি নদীতে। ঝারি খালটি ফুলছড়ি কালুর ঘোনা থেকে নদীর সাথে সংযুক্ত। ঝারি খালের একটি শাখার মুখ গোল্ডেন ফার্ম প্রাঃ লিঃ নামের ইজারাদার মাটির বেড়ীবাঁধ দিয়ে পানির প্রবাহ বন্ধ করে ঘেরে পরিনত করেছে স্থানীয় বেশ ক’জন প্রভাবশালী সিন্ডিকেট। তারা ঝারি খালের কয়েক শ মিটার এলাকা অবৈধ বাঁধ দিয়ে মাছ চাষের নামে খালের পানি প্রবাহ ও পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা বাঁধাগ্রস্থ করে চলেছে। সেই সাথে ফুলছড়ি কালুর ঘোনা ও ঝারি খালের দুই পাশের জমি জবরদখল ও ভরাট করে অবৈধ চিংড়ি ঘের তৈরি করায় ঝারি খাল বর্তমানে অনেকটাই নব্যতা হারিয়ে ক্রমশ মরা খালে পরিনত হয়েছে।

ফলে এসব এলাকার পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা চরমভাবে বাঁধাগ্রস্থ হওয়ার পাশাপাশি খালের স্বাভাবিক পানি প্রবাহের ধারা গতিহীন হয়ে পড়েছে। ইতোপুর্বে ঝারি খালটি অবৈধ দখলদারদের কবলে পড়ে মৎস্য ঘেরে পরিনত হয়েছে। গোল্ডেন ফার্মের দখলদাররা ঝারি খাল বন্ধ করে মৎস্য ঘের হিসেবে ব্যবহার করে আসছে বলে অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় জমির মালিক মরহুম ফজল করিমের পুত্র আকতার আহমদ। তিনি বলেন, ঝারি খালের পাশে তার বাপ দাদার সম্পত্তি থেকে দখলদাররা দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চিত করে আসছে। কালুর ঘোনা বিলুপ্ত করে ভুমিগ্রাসীরা ঝারি খালটিও ইজারার নামে ভুমিদস্যুরা কবলে নিয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ঝারি খালটির পানি প্রবাহ ব্যহত করে চলেছে অসাধু একটি চক্র। তাছাড়া খালের দুপাশ ভরাট করে অবৈধ চিংড়ি ঘের গড়ে তোলায় রাতদিন ঘটছে অহরহ ঘটনা। ঝারি খালটি একচেটিয়াভাবে দখলে নেয়ার প্রধান ভুমিদস্যু স্থানীয় বিএনপি নেতা জাফর। তার নেতৃত্বে খালের বিভিন্ন স্থানে বাঁধ দিয়ে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা বাঁধাগ্রস্থ করা হচ্ছে। শুধু পানি নিষ্কাশন বাঁধাগ্রস্থ নয়, খালটির মুখে মাটির বাঁধ দিয়ে সম্পুর্ন খালটি মৎস্য ঘেরের মধ্যে দখল করে নিয়েছে। তিনি আরো বলেন, বিলুপ্ত কালুর ঘোনার আমরা ৫০ জন অংশীদার। ৮ টি খতিয়ানে তাদের প্রায় ৩০ কানি লবণ মাঠ রয়েছে। গোল্ডেন ফার্মের প্রভাবশালীরা তা দখলে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। তাদের দখলের হাত থেকে রক্ষা পায়নি ঝারি খালও। অথচ ফুলছড়ির বিভিন্ন এলাকার পানি এই খালের মাধ্যমে নিষ্কাশিত হয় যুগ যুগ ধরে। কিন্তু অবৈধ দখলদারিত্ব আর ইজারার নামে মৎস্য ঘের হিসেবে বেশ কিছু প্রভাবশালীরা ব্যবহারের কারনে নব্যতা হারানোর পাশাপাশি বর্তমানে চরমভাবে বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে বেশ কয়েকটি চিংড়ি ঘেরের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা সহ খালের স্বাভাবিক পানি প্রবাহের ধারা। তার অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে সরকারী ঝারি খাল প্রভাবশালী, সুবিধাবাদীদের অপব্যবহারের ফলে নব্যতা হারাতে বসলেও, খালের অস্তিত্ব রক্ষার পাশাপাশি অবৈধ দখলদারিত্ব উচ্ছেদ ও অপসারনে প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহন না করায় ক্রমশ দখলদারদের মাঝে খাল দখলের প্রবনতা বেড়েই চলেছে। আর পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ও পানির প্রবাহ বাঁধাগ্রস্থ হওয়ায় ঝারি খাল নব্যতা হারিয়ে গতিহীন হয়ে পড়ায় প্রতিনিয়ত জলাবদ্ধতার কবলে পড়ে জনদুর্ভোগে পড়ছে এলাকার লবণ মৎস চাষীরা। স্থানীয় লবন মৎস্য চাষীরা অবিলম্বে খাল দখলের মহোৎসব বন্ধ ও বাঁধ অপসারনে মোবাইল কোর্টের অভিযান পরিচালনার উদ্যোগ নেয়ার জন্য চকরিয়া উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন

পাঠকের মতামত: